রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনিত হলেন তারিকুল হায়দার চৌধুরী

দিগন্তের বার্তা ২৪ ডেস্ক : / ৩০৮ বার পঠিত
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ১:১৪ পূর্বাহ্ণ

নিউজ ডেস্কঃ চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে ঐতিহাসিক ২৪শে জানুয়ারিতে ঘটা নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ্যস্বাক্ষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় ‘তারিকুল হায়দার’ এর নাম। হত্যাকাণ্ডের আগেই বেছে বেছে তুখোড় নেতাদের জেলবন্দী কর স্বেরাচার এরশাদের লেজুড়বৃত্তি করা তৎকালীন পুলিশ বাহিনী। এক দিকে পুলিশ অন্যদিকে পার্টির শীর্ষ সন্ত্রাসী আদদু বাহিনী ক্ষমতা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসার প্রাচীর তৈরি করে গুলি থেকে প্রাণ বাঁচাতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন চট্টগ্রামের কিছু তরুন ছাত্রনেতারা। একই বছরের নভেম্বর মাসে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন দমাতে চট্টগ্রামের রাজপথে ছাত্রলীগের প্রভাব শুন্য করতে ‘ তারিকুল হায়দার’ ও মনির নামের দুজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে শেখ হাসিনার বক্তব্য রাজবন্দী দুই ছাত্রনেতা তারিকুল ও মনিরের মুক্তির দাবি উচ্চারিত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্রকে বুক উঁচিয়ে রুখে দেন চট্টগ্রামেরই কিছু তরুন।


প্রত্যক্ষদর্শি আওয়ামী লীগ নেতা মো: মহিউদ্দিনের ভাষ্যমতে, ‘ চট্টগ্রামের লালদিঘি, কেসিদে রোড, জেলরোড, বক্সিরহাট মোড়সহ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসভায় আগতদের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয় ।

নেত্রীর উপর গুলি করার সময় এক পুলিশ রাইফেলের কানেকশন বেল্ট খুলে ফেলায় তিনি বেঁচে যান। সাবেক মেয়র ও তৎকালীন ছাত্রনেতা আ জ ম নাসির উদ্দীনও জেলখানায় বন্দী। চট্টগ্রামের আইনজীবীরা শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে আইনজীবী সমিতির অফিসে নিয়ে রক্ষা করেন। ওইদিন পুলিশের গুলিতে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ আহত হয় অন্তত তিন শতাধিক।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। আসামিদের তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিনের সাজাও হয়েছে।

চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা নাসির উদ্দীন বলেন, ‘ এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সামরিক জান্তা এরশাদের রোষানলে ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে গৃহবন্দি হতে হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে তিনি আবারও তিনমাসের মত গৃহবন্দি ছিলেন।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন আটদলীয় জোটের জনসভায় লালদিঘির ময়দানে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল এরশাদ সরকারের পুলিশ ও সাদা পোষাকধারীরা। তখন পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ২৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জনই শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন।

উত্তাল সে সময়ের অন্যতম সাহসী সৈনিক রাশেদ, তারিকুল হায়দার দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী বসতি গড়েন। পুলিশের মামলার পর মামলা ও কারাগারের বন্দী জীবন থেকে বাঁচাতে তারেকুল হায়দারের মা তাদের চট্টগ্রাম শহরের জমি দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে তাকে পাঠিয়ে দেন আমেরিকা। ১৯৯১ সালের ৮ ই ডিসেম্বর মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে জীবন বাঁচিয়ে কোন রকম পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তারিকুল হায়দার। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তারেকুল৷ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও তারিকুল হায়দার যুবলীগ, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়।

১৯৮১ সাল থেকে নব্বই ; বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য পুরোটাই বিপদসংকুল। ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড হত্যা বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনার জন্য কখনোই রাজনীতির মাঠ মসৃণ ছিলো না। তরুনদের ভালোবাসা আর বঙ্গবন্ধুপ্রেমী মানুষের দোয়ার কারণেই সেই পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি সফলতা শীর্ষচূড়ায় পৌঁছে গেছে। এরমধ্যে ৯৬ সালে দল ক্ষমতায় আসে প্রথমবারের মতো, বিদেশ বিভুইয়ে আওয়ামী রাজনীতির মায়ায় দেশে ফেরা হয় নি তারিকুল হায়দারের।

বিশ্লেষকদের মতে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দলটির ত্যাগী সেসব রাজপথের কর্মীদের ত্যাগের মুল্যা দিতে পারে নি। সুত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রে কিছু কেন্দ্রীয় নেতার স্বেচ্ছাচারিতা, তদবির বাণিজ্য, অবৈধ টাকাপাচারের কাহিনি প্রবাসী নেতাকর্মীদের মুখেমুখে। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে ‘স্বাক্ষাৎ বাণিজ্যের ‘ কথা ফাঁস করার কারণে যুবলীগের আহবায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে ‘তারিকুল হায়দার ‘কে।

জানা যায়, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুলের সহোদর তারিকুল হায়দার। যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের (২০১৩ সালে) হাল ধরার পর সুসংগঠিত হয়েছে যুবলীগ। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতায় গতি আসলেও দলের কিছু সুবিধাভোগী নেতাদের রোষানলে পড়ে বর্তমানে সেই কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

কেমন ছিলো নব্বইয়ের আগের ছাত্র রাজনীতি এমন প্রশ্নে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক কলিম সরওয়ার জানান, ‘ চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তবারক হত্যার পর থেকে নির্যাতনের খড়ক নামে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের উপর। ১৯৮৪ সালে রাতে চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলে নারকীয় কায়দায় তারা হত্যা করে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাদাত হোসেনসহ দুই ছাত্রকে। একের পর এক প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ, বাকশালপন্থী জাতীয় ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নকে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয় ।

একইসঙ্গে শিবির চট্টগ্রাম কলেজের পার্শ্ববর্তী সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় আশির দশকেই। এরপর থেকে প্রায় তিন দশক পর্যন্ত প্রগতিশীল কোনো ছাত্র সংগঠন চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি।

১৯৮৫ সালে বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্ণেল ফারুক চট্টগ্রামে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা করতে এলে কর্ণেল ফারুককে সমাবেশ মঞ্চে উঠতেই দেননি চট্টগ্রামের সেই সময়ের অকুতোভয় ছাত্রনেতারা৷ আ জ ম নাসির উদ্দীনের পরিকল্পনা মতো চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ী এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে সমাবেশস্থলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান তারা। শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামে খুনি ফারুকের সমাবেশ পন্ড হয়। সমসাময়িক দেয়া তথ্যমতে, ফারুকের সেই সমাবেশ পন্ড করতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান সার্কিট হাউস এলাকায়। সে ঘটনায় জীবন বাজি রেখে শফিক আদনান ( নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) তারিকুল হায়দার, শফিকুল হাসানসহ কিছু তরুন দুর্দান্ত সাহসিকতার পরিচয় দেন।

সমসাময়িক ছাত্রনেতাদের ভাষ্য আশির দশকের সেই উত্তাল সময়ে ইসলামি ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে শহরে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন যে কয়জন ছাত্রনেতা তাদের মধ্যেও অন্যতম ‘ তারিকুল হায়দার ‘। তুমোল সাহসী এই তরুন বিপদসংকুল নয় বছরে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন যৌবনের বাঁকে বাঁকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারীদের হাতেই নেতৃত্বের খাতা থেকে কাটা পড়েছে তারিকুল হায়দারের নাম।

জানতে চাইলে তারিকুল হায়দার বলেন, সেই উত্তাল দিনে আমারা ছিলাম জননেত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড। আমার রাজনৈতিক জীবনের সোনালী দিনগুলি ছিলো বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ঘিরে ।আমাদের সেই দিনগুলি বর্তমানের মতো মসৃন ছিলনা, প্রতিদিন জেল- মামলা আর মূত্যুর হাতছানি । এখন তো দল ক্ষমতায়, হাইব্রীডদের ভীড়ে আমরা অবহেলিত ॥’

পুলিশের মামলার পর মামলা ও কারাগারের বন্দী জীবন থেকে বাঁচাতে তারিকুল হায়দারের মা তাদের চট্টগ্রাম শহরের জমি দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে তাকে পাঠিয়ে দেন আমেরিকা। ১৯৯১ সালের ৮ ই ডিসেম্বর মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে জীবন বাঁচিয়ে কোন রকম পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তারেকুল হায়দার।

সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তারিকুল৷ যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও তারেকুল হায়দার যুবলীগ, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। ১৯৮১ সাল থেকে নব্বই ; বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য পুরোটাই বিপদসংকুল।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর