আলমগীর হোসেন,সখিপুর (টাংগাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইল সখীপুরের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে তিনি ৪১ তম বিসিএসে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। পেশাগত দায়িত্বের প্রথম নিয়োগে তিনি সখীপুরে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে পদায়িত হন। যদিও অভিজ্ঞতা না থাকলে আরএমও পদে কাউকে পদায়িত করা হয় না। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই তিনি তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেশের মাধ্যমে সখীপুরে আরএমও পদের অর্ডার এনে যোগদান করেন।
ডাঃ মনিরুল ইসলাম সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) হিসেবে কয়েক মাস আগে যোগদানের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের গুঞ্জন শুরু হয়। সময় মেনে নিয়মিত ইনডোর রাউন্ডেরও ব্যত্যই ঘটেছে বহুবার। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরএমও ডাঃ মনিরুলকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সতর্ক করলেও কোন লাভ হয়নি বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
ডাঃ মনিরুলের সহধর্মিনীও একজন ডাক্তার। তিনি সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন পদে না থাকলেও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন বলে জানা যায়।
ডাঃ মনিরুল ইসলাম হাসপাতালের রোগীদের একপ্রকার বাধ্য করেই স্থানীয় নিধি ডায়াগনো কমপ্লেক্সে সকল ধরনের পরীক্ষার জন্য সুপারিশ করে পাঠান বলেও জানান একাধিক ভুক্তভোগী।
গত ২৬ অক্টোবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাড থেকে পাওয়া যায়, মৌমাছির কামড়ে আহত তিন বছর আট মাস বয়সী এক রোগীর ঔষধের তালিকায় দেখা যায় একই ঔষধ ট্যাবলেট ও সিরাপ উল্লেখ করা। উল্লেখিত ঔষধ গুলো ওই অল্প বয়সেই শিশুর জন্য প্রযোজ্য নয় বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়। শিশুদের ঔষধের তালিকায় সিরাপ জাতীয় ঔষধ প্রাধান্য পাবে বলে জানান একাধিক চিকিৎসক।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ডাঃ মনিরুল ডেঙ্গু পজিটিভ এক রোগীকে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ঔষধ লিখে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২ টা পার হলেও যখন ডাঃ মনিরুল হাসপাতালে রাউন্ড দিতে না আসলে ছুটির জন্য অপেক্ষমান রোগীরা হট্টগোল শুরু করেন। পরে কিছু লোকজন ডাঃ মনিরুল ইসলামের বাসায় গিয়ে দেখা যায় তিনি এয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনছেন। তাকে আসার জন্য বললেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি বলে জানা যায়।
একই দিন সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরএমও ডাঃ মনিরুল ইসলাম সাথে আরো এক সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসারের উপর চড়াও হয়ে গালাগালি করেন ও উদ্যত আচরণ করেন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে মানুষ এমন আচরণ প্রত্যাশা করেননা বলে জানান ওই সময় উপস্থিত থাকা একাধিক সেবা গ্রহণকারী।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, ডাঃ মনিরুল ইসলাম হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় এবং তাঁর বাড়ি এই উপজেলায় হওয়ায় তিনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। তার আচরণ ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট অনেকেই দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্ত বলেন, আমরা অনেক আরএমও’র সাথে কাজ করেছি। এমন আচরণ কারো কাছ থেকে পাইনি। আমরা প্রত্যেকে আত্মসম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে চাই। একজন সহকর্মী হবে সহযোগিতা পরায়ণ। আর আমরা পাচ্ছি তার উল্টো। আমরা চিকিৎসা সেবার সঙ্গে আছি তাই প্রশ্নবিদ্ধ হতে চাই না।
আমরা এর প্রতিকারসহ এই প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক ধারা বজায় রেখে মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি নিয়ম নীতি মেনেই সকল কাজকর্ম করছি। আমি কাউকে জোর করে কোন ক্লিনিকে পাঠাই না। চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন বিষয়ে একজন চিকিৎসকই বলতে পারবে এটা ঠিক নাকি বেঠিক। উদ্যত আচরণ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এটা আমাদের ইন্টারনাল বিষয় আমরা বসে তা সমাধান করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুহুল আমিন মুকুল বলেন, তাঁর বিষয়ে আমি বেশ কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাকে সতর্কও করেছি। সিভিল সার্জনকেও বিষয়টি আমি জানিয়েছি। এর চেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ আমার নাই। কারণ ডাঃ মনিরুল ইসলাম আমাদের মাধ্যমে নয়, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরএমও হিসেবে এখানে যোগদান করেছেন।