অর্থনীতি ডেস্ক :দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী বলেছেন, আমরা মনে করি ব্যবসা আমাদের মূল পেশা এবং আমাদের লক্ষ্য হলো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। যেহেতু দেশের অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের দরকার আছে, আমি মনে করি ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি এমন একটা ইন্ডাস্ট্রি যার বদৌলতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার সভাকক্ষে ‘বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প: রপ্তানি সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং বাংলাদেশ ফার্নিচার রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিএফইএ) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ইপিবি’র সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এবং পরিচালক (নীতি) আবু মুখলেস আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফইএ সভাপতি দেওয়ান আতিফ রশিদ।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর, ভিয়েতনাম পারলে দেখো শতবার’। আমার মনে হয় অবশ্যই আমরা পারবো। আমরা যারা দেশে ব্যবসা করি, আমরা আমাদের ইনপুট যদি ন্যায্যমূল্যে না পাই, তাহলে আমরা কখনই চায় না, ভিয়েতনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবো না। এটা কাপড় হোক, বোর্ড হোক, পেপার হোক, পেরেক হোক, নাটবল্টু হোক- ফার্নিচার বানাতে যা যা লাগে প্রত্যেকটি জিনিস সাশ্রয়ী মূল্যে পেলে কিন্তু আমরা জিততে পারবো, না হলে কিন্তু জেতা যাবে না।
তিনি বলেন, এখন মূল যে সমস্যা হলো, আমরা সবাই কোনো না কোনো পর্যায়ে আছি। কেউ বোর্ড বানাচ্ছি, কেউ রং বানাচ্ছি, বিভিন্নজন বিভিন্ন জিনিস বানাচ্ছি। সরকারের পলিসিগুলো কিন্তু কুইক এবং প্রমোট অ্যাকশনে হতে হবে। আমাদের ইনপুটে যা যা লাগে সেটা দিতে হবে। আমরা যদি বন্ডে মালগুলো আনতে পারি, তাহলে আমরা জিততে পারবো।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও বলেন, এখন একজনের রঙের কারখানা আছে, তিনি যদি রং উৎপাদনের কাঁচামাল ডিউটি ফ্রি না আনতে পারেন, তাহলে আমরা জীবনেও দাঁড়াতে পারবো না। ১০০ শতাংশ ডিউটি দিয়ে আমরা কখনই চায়নার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসতে পারবো না। আমরা কেউ চোরও না, ডাকাতও না।
তিনি বলেন, আজ আমাদের দরকার হলো বন্ড ফ্রি ইমপোর্ট, ডিউটি ফ্রি ইমপোর্ট। কিন্তু ডিউটি ফ্রির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে ১০০ ভাগ গ্যারান্টির আওতায় দেওয়া হবে যা যৌক্তিক নয়, কারণ আমি কিন্তু একজন রপ্তানিকারক। আমি যদি ৬৫ দিনে রপ্তানি করতে না পারি তাহলে আমি কড়ায়-গণ্ডায় সরকারকে বুঝিয়ে দেবো যে আমি ডিউটি না দিয়ে আসছি। তবে তার আগ পর্যন্ত কিন্তু সরকারকে আমাকে ন্যায্যমূল্যে মাল আনার সুযোগ দিতে হবে। এই দাবি কেবল ফার্নিচারে না, প্রতিটি সেক্টরে। বাণিজ্যমেলার এবারের আসরে অনেক কোম্পানি আছে যারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের যদি আমরা ডিউটি ফ্রি সুবিধা দিতে পারি অবশ্যই ভালো।
আহসান খান চৌধুরী বলেন, ডিজাইনের ক্ষেত্রে বলবো, আমাদের অবশ্যই ধাপে ধাপে যেতে হবে। আমরা পিরামিডের নিচে থেকে শুরু করবো। প্রথমে আমরা ওয়ালমার্টের কাছে বিক্রি করবো, টার্গেটের কাছে বিক্রি করবো, তারপর আস্তে আস্তে আমরা দামি ফার্নিচার সেক্টরে যাবো। বর্তমানে ফার্নিচার শিল্প গড়ে উঠেছে। আমরা যদি একটু রপ্তানির সুযোগ পাই অবশ্যই আমরা ভালো করবো।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের ফার্নিচার শিল্পের রপ্তানি ৫-৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার পর চায়নায় ট্রাম্প ট্যাক্স ইম্পোজ হয়েছে যা ২৫ শতাংশ। আমরা প্রথম ট্রাম্প ট্যাক্সের সুযোগ হারিয়েছি, আমরা দ্বিতীয় ট্রাম্প ট্যাক্সের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন, আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ, যাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাড়াতে পারবো।
আমরা ফার্নিচার সেক্টরে মাত্র ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি করছি, যা অনেক অনেক কম। যেন হাত পা বেঁধে ফার্নিচার উৎপাদনকারীকে বলা হচ্ছে সাগরে সাঁতার কাটতে। এখন সময় আসছে, তড়িৎ অ্যাকশনে আমাদের যেতে হবে। আমাদের নেগোসিয়েশন কিন্তু কড়াভাবে করতে হবে।’ যোগ করেন তিনি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, যারা বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে, তাদের বলতে হবে যে আমাদের ফার্নিচার শিল্পের জন্য এটা লাগবে, আপনারা এই এই টেস্টিং মেকানিজম সিস্টেম বাংলাদেশে বানাবেন, বুয়েটকে বলবো আমাদের যা যা টেস্টিং প্যারামিটার দরকার সবগুলো রেডি করে আমরা ফার্নিচার সেক্টরকে আমরা এগিয়ে নেবো।
তিনি বলেন, যদি ভিয়েতনাম পারে আমরা ভীষণভাবে পারবো। আগামী চার বছর ট্রাম্প সরকারে সুযোগ, এই সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে যেন আমরা আগামীদিনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। যদি কোনো ট্যারিফ সুবিধা নাও থাকে, তারপরও বাংলাদেশের ফার্নিচার সেক্টর এগিয়ে যাবে এবং আমরা ভীষণ ভালো করবো।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইন স্কুলের ডিন অধ্যাপক ফুয়াদ এইচ মল্লিক, বুয়েটের ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালিউরজিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ শরিফ, হাতিল গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান, বন বিভাগের ডেপুটি চিফ কনজারভার মইনুদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।