বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

জন্মদিনের আগে জোড়া গোল রোনালদোর

দিগন্তের বার্তা ২৪ ডেস্ক : / ৫ বার পঠিত
আপডেট : বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৬:২৬ অপরাহ্ণ

সাপোর্ট রিপোর্ট:– পর্তুগাল জাতীয় দলের চিকিৎসক হোসে কার্লোস নরনহার কাছে প্রশ্ন, ‘ডাক্তার, তোমার কাছে কি পুষ্টি বিদ্যা বা এধরনের বিষয়ের ওপর পড়ার মতো কোনো আর্টিকেল আছে?’ এমন প্রশ্ন কে এবং কেন করতেন? ঠিকই আন্দাজ করেছেন। মানুষটি আর কেউ নন, ক্রিস্টিয়ানো রোনাদলো।

এই নরনহার সঙ্গে রোনালদোর পরিচয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তার প্রথম পর্বের সময় থেকে। তখন থেকেই নিজের ফিটনেস নিয়ে খুবই সচেতন পর্তুগিজ উইঙ্গার।

মাঠে কীভাবে দীর্ঘ সময় কাটানো যায়, সেজন্য নিয়মিত কঠোর অনুশীলন ও শারীরিক কসরত করেন তিনি। নতুন কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক আর্টিকেল পেলেও নিমিষে পড়ে ফেলেন তিনি।

যে কারণে রোনালদোর পড়ার জন্য আর্টিকেল খোঁজ করাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখেন নরনহা।

নরনহাকে একবার ‘ভেরি স্পেশাল ওয়ান’ তকমা দিয়েছিলেন ফুটবল কোচদের ‘স্পেশাল ওয়ান’ খ্যাত হোসে মরিনহো।

সেই চিকিৎসক আবার রোনালদোকে ‘খুবই জ্ঞানপিপাসু’ আখ্যা দেন। তার মতে, রোনালদো এমন একজন খেলোয়াড় যিনি সর্বোচ্চ শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস ধরে রাখতে উদগ্রীব।

আজ বুধবার ৪০-এ পা দিয়েছেন রোনালদো। এই বয়সে অধিকাংশ ফুটবলার বুটজোড়া তুলে রাখেন, কেউবা যোগ দেন কোচিংয়ে। কিন্তু আল নাসরের এই মহাতারকা বাকিদের মতো নন। এই বয়সেও দিব্যি ৯০ মিনিট মাঠে কাটাতে সক্ষম তিনি। তার আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি চোখে পড়ে না। গত সোমবার ‘স্প্যানিশ টিভি’-তে বেশ গর্বের সঙ্গে নিজেকে ‘ইতিহাসের সেরা কমপ্লিট খেলোয়াড়’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ‘সিআর সেভেন’।

জন্মদিনের আগের রাতে আল নাসরের জার্সিতে জোড়া গোল করেছেন রোনালদো। সর্বশেষ ৪ ম্যাচে করেছেন ৬ গোল। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত তার গোলসংখ্যা ২৩টি। তার গোলক্ষুধা দেখে কে বলবে বয়স ৪০ ছুঁয়ে ফেলেছে! বিশ্বকাপ ছাড়া সব অর্জন আছে তার ঝুলিতে। এই বয়সেও হাঁটুর বয়সী ফুটবলারদের টেক্কা দিচ্ছেন তিনি।

ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে বহু পুরনো বিতর্ক হচ্ছে, কে সেরা, লিওনেল মেসি নাকি রোনালদো। ২০২২ বিশ্বকাপ জেতার পর মেসি এই লড়াইয়ে এগিয়ে গেছেন, এমন বলা হলেও রোনালদো তা মনে করেন না। তার মতে, তার সমকক্ষ আর কেউই নেই। স্প্যানিশ টিভিকে যেমন বললেন, ‘আমি মনে করি, আমিই ইতিহাসের সবচেয়ে পুর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়। আমার দেখে ভালো কাউকে দেখিনি। অন্তর থেকে সত্যি কথাটাই বলছি। লোকে মেসি, ম্যারাডোনা বা পেলের কথা বলে। আমি তাদের সম্মান করি। কিন্তু আমিই পুর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়। ‘

রোনালদোর নিজেকে সেরা বলার অভ্যাস দীর্ঘদিনের। তবে এই বয়সেও খেলা চালিয়ে যাওয়ার আইডিয়া বেশিদিন আগের নয়। তার সাবেক সতীর্থ কস্তিনহা ২০০৩ সালে কাজাখস্তানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে রোনালদোর অভিষেক ম্যাচের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সে (রোনালদো) বলেছিল, ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত খেলবে এবং এরপর অন্য কিছু করবে। ‘

রোনালদো তার কথা রেখেছেন, কিন্তু ৩০ পেরিয়েও দিব্যি খেলছেন তিনি। বরং তার গোল করার সামর্থ্য যেন আরও বেড়েছে। ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তার গোল ছিল ৪৪০টি, আর ৩০-এর পর থেকে তার গোল এখন পর্যন্ত ৪৬০টি। এটা মোটেই স্বাভাবিক নয়, কিন্তু রোনালদোর সবকিছুই আসলে অস্বাভাবিক। ৪০ পেরিয়েও হয়তো অস্বাভাবিক কিছু করবেন তিনি।

বয়স, ফিটনেস বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, রোনালদোর সামনে এখনো অনেক অর্জন হাতছানি দিচ্ছে। এর মধ্যে ২০২৬ বিশ্বকাপ তো আছেই। বিশ্বকাপ স্বপ্ন পূরণের শেষ চেষ্টা তিনি করতেই পারেন। সম্প্রতি তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এটা বলে যে, তিনি এখনো জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে চান। তার সামনে অপেক্ষা করছে ১০০০ গোলের মাইলফলক। এখন তার গোলসংখ্যা ৯২৩টি। পর্তুগালের জার্সিতে ২৫০ গোলে কীর্তিও গড়তে পারেন তিনি। যেখানে তার গোল এখন পর্যন্ত ২১৭টি।

রোনালদোর অভিধানে ‘অসম্ভব’ বলে কিছু নেই। তার বড় ছেলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুনিয়রের বয়স এখন ১৪ এবং আল নাসরের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলছে। রোনালদো যেভাবে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে বাবা-ছেলের একসঙ্গে মাঠে নামার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফুটবলের সব কীর্তি হয়তো তার একার পক্ষে গড়া সম্ভব নয়, তবে তার মানসিকতা সবসময় বিজয়ীর।

ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর চেয়ে সফল আর কোনো ফুটবলার নেই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তারকাখ্যাতি পাওয়া রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে গিয়ে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনন্য উচ্চতায়। একই লিগে খেলতেন লিওনেল মেসি। দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অবিশ্বাস্য পর্যায়ের। ইউনাইটেড থেকে রিয়াল এবং শেষে জুভেন্টাস, এই সময়ে পাঁচবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রোনালদো। এই সময়ের মধ্যে নিজেকে পর্তুগালের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত করেন তিনি।

পর্তুগাল জাতীয় দলের ৩০ শতাংশের বেশি ম্যাচেই মাঠে উপস্থিত থেকেছেন রোনালদো। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, পর্তুগাল দলের পরিবেশটাই বদলে দিয়েছেন তিনি। যে পর্তুগালকে মাঝারি মানের দল হিসেবে গণ্য করা হতো, সেই দলকে তিনি শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে ইউরোর চ্যাম্পিয়নও হয়েছে পর্তুগিজরা।

রোনালদোর কারণে ইউরোপের ছোট দেশ পর্তুগালের নাম সারা বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৬ বিশ্বকাপে তাকে দেশের জার্সিতে দেখতে পাওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ২০৩০ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক পর্তুগালই। সেই বিশ্বকাপ হয়তো গ্যালারিতে বসে দেখতে হবে তাকে। তবে অন্য ভূমিকাতেও থাকতে পারেন তিনি। হয়তো কোচ হিসেবে, কিংবা বাবা (যদি তার ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পায়) হিসেবে।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর