জাতীয় ডেস্ক:- মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের আছিয়ার বাড়িতে এখন কেউ নেই। গোটা বাড়িটিতে শুনশাস নিরবতা।
যা মৃত্যুর শোককেও ছাপিয়ে গেছে। পিতা ফেরদৌস শেখ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন।
অন্য দুই সন্তানসহ তিনি আশ্রয় নিয়েছেন আছিয়ার চাচা ইব্রাহিম শেখের বাড়িতে।
আছিয়াদের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যার কিছু আগে তাদের বাড়িতে যেয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘরগুলোতে তখন তারা ঝুলছিল।
পরিস্থিতি এমন ছিল যে যেন এক মৃত্যুপূরিতে প্রবেশ করা হয়েছে।
সাংবাদিক এসেছেন শুনে ছুটে আসেন ফেরদৌস শেখ। এই প্রতিনিধিকে দেখে তিনি যেন একটু সম্বিৎ ফিরে পান।
কথা বলা শুরু করলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মানুষটি। বলেন, ‘আমার মনিরে যারা ওই রকম অসুবিধা করেছে আমি তাগের…’। অনেকক্ষণ দম নিয়ে আবার বলেন, ‘দ্রুত ফাঁসি চাই’। তারপর আবার নীরবতা ফেরদৌস শেখের চোখমুখে। যেন বুক ভাঙা এক কান্নার আকুতি। কাঁদতে পারছেন না তাই একবার বুক চাপড়াচ্ছেন, একবার মাথায় হাত দিয়ে হাহুতাস করছেন।
কথা হয় আছিয়ার চাচা ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী আঁখি খাতুনের সাথেও। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন আগে আছিয়ার বড়বোন বাবার বাড়িতে এসে জানান যে তিনি আর শশুর বাড়িতে যেতে চাননা। কারণ জানতে চাইলে সে বলেছিল তার শশুর হিটু শেখ তাকে বিভিন্ন সময় জড়িয়ে ধরে। ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সে শশুর বাড়িতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
কথা হয় আছিয়ার চাচা ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী আঁখি খাতুনের সাথেও। তিনি জানান, বেশ কয়েকদিন আগে আছিয়ার বড়বোন বাবার বাড়িতে এসে জানান যে তিনি আর শশুর বাড়িতে যেতে চাননা। কারণ জানতে চাইলে সে বলেছিল তার শশুর হিটু শেখ তাকে বিভিন্ন সময় জড়িয়ে ধরে। ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। সে শশুর বাড়িতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
আঁখি খাতুন বলেন, ‘আমরা তখন মেয়েটির কথায় বিশ^াস করতে পারিনি। একজন শশুর মানে আব্বা। সে কি করে নিজের মেয়েকে (বৌমা) এভাবে খারাপ কাজ করতে পারে! সে কারণে আমরা তাকে বুঝাই সে যেনো শশুর বাড়ি ফিরে যায়’।
কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই রাজি না হওয়াতে আমরা ওর ছোটবোন আছিয়াকে ওর সাথে পাঠাই আর বলি আছিয়াই তোরে রক্ষা করবে-বলেন চাচি আঁখি খাতুন।
তিনি বলেন, ‘কীভাবে বুঝবো যাকে গার্ড (নিরাপত্তা) দেওয়ার জন্যি পাঠাইলাম সেই ওই পশুর (বড় মেয়ের শশুর) লালসার শিকার হবে। আমরা এর বিচার চাই। উপযুক্ত বিচার চাই। ওই জানোয়ারেরা কোনোভাবেই যেনো পার না পায় আপনারা সেডা দেখবেন’।
সাংবাদিক এসেছেন শুনে আশপাশ থেকে আরও কিছু মানুষ জড়ো হন আছিয়াদের বাড়িতে। তাদের কয়েকজনের সাথেও কথা হয় এই প্রতিনিধির। তারা কিছুতেই এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। সবার মুখে শুধু একটিই প্রশ্ন, আট বছর বয়সী একটি শিশুকে কীভাবে বাপের মতো তালই (বোনের শশুর) ধর্ষণ করতে পারে।
এলাকাবাসী জানান, আছিয়ার পিতা ফেরদৌস শেখসহ পরিবারের সদস্যরা একবারে ভেঙে পড়েছেন। তারা নিজেদেরকে খুব একটা নিরাপদও মনে করছেন না। একদিকে শিশু সন্তানের জীবনের শংকা, অন্যদিকে মামলা-মকদ্দমা নিয়ে পরিবারটি একেবারে অস্থির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পিতা ফেরদৌস শেখের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। মাঝেমধ্যে তিনি বিলাপ করতে থাকেন মেয়ের জন্য।
এলাকাবাসীও অবিলম্বে আছিয়ার ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।
গত বুধবার (০৫ মার্চ) রাতে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছর বয়সী এক শিশু। ধর্ষক তাকে হত্যারও চেষ্টা চালায়। বর্তমানে শিশুটি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় চারজনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।