আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হামাসের কাছে ইসরায়েলের একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিশরের রাষ্ট্রীয়ঘনিষ্ঠ টেলিভিশন চ্যানেল আল কাহেরা নিউজ। তবে হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এমন রয়েছে যা দলটির জন্য পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।
আল কাহেরা সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা এখন হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
পরে এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে এবং যথাশীঘ্র সম্ভব তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
হামাস আবারও তাদের মূল দাবি তুলে ধরে বলেছে, একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হওয়া উচিত গাজা থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের স্থায়ী অবসান।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের শীর্ষ নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, নতুন প্রস্তাবে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ইসরায়েলি প্রতিশ্রুতি নেই, যা তাদের প্রধান দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই প্রস্তাবে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো পরবর্তী ধাপে হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি তোলে, যা হামাস স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আবু জুহরি বলেন, প্রতিরোধের অস্ত্র সমর্পণ আমাদের কাছে রেড লাইন— এটি আলোচনার তো দূরের কথা, বিবেচনারই অযোগ্য।
মিশরের রাষ্ট্রীয় তথ্য পরিষদের প্রধান আল কাহেরাকে বলেন, হামাস এখন সময়ের গুরুত্ব ভালোভাবে বোঝে এবং আমি বিশ্বাস করি, তারা দ্রুতই প্রস্তাবের জবাব দেবে।
উল্লেখ্য, জানুয়ারির শেষ দিকে কার্যকর হওয়া একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর মার্চে ইসরায়েল গাজায় নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করে। সোমবার কায়রোতে যুদ্ধবিরতি পুনঃস্থাপন ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ আলোচনা কোনও অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি ও মিশরীয় সূত্রগুলো।
হামাস স্পষ্ট করে বলেছে, জানুয়ারির ত্রিস্তর চুক্তির আলোকে ইসরায়েলকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের অঙ্গীকার করতে হবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা এবং বাকি জিম্মিদের ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে না।
আবু জুহরি জানান, সব জিম্মিকে একসাথে হস্তান্তরের জন্য হামাস প্রস্তুত রয়েছে, যদি ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করে এবং সেনা প্রত্যাহার করে।
গত এক মাসে ইসরায়েলি অভিযানে ১,৫০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এই অভিযান গাজায় লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতি ঘটিয়েছে এবং খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সহায়তার উপর কঠোর অবরোধ আরোপ করেছে।
বর্তমানে হামাসের কাছে ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত রয়েছে বলে বিশ্বাস করে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০,৯৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১১৬,২৭৪ জন আহত হয়েছেন। আর ফিলিস্তিনি সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকেও মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।