আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর নির্বিচারে হামলায় গত একদিনে কমপক্ষে ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মধ্য,উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল— অর্থাৎ গাজার সর্বত্র ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। এসব হামলায় ৬৪ জন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫১ হাজার। নিহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান হামলায় আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জনে।
গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত চলমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০ জনেরও বেশি বলে জানিয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এই দুই ঘাঁটি থেকেই শুক্রবার দিনে ও রাতে হামলায় পরিচালনা করা হয়েছে। এসব হামলায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই গাজার প্রধান শহর গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা।
হামলার পর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ফের জানিয়েছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করা—ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগোচ্ছে। ’
গতকাল শুক্রবার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে। ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার কারণে স্থানীয় গির্জাগুলোতে ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা সংক্ষিপ্ত করেছেন গাজার খ্রিস্টানরা।
গাজার স্থানীয় একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ নামের এক ব্যক্তি আলজাজিরাকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে গুড ফ্রাইডের দিন আমরা সবাই পরিবার-পরিজনসহ গির্জায় আসতাম। সবার সঙ্গে সবার দেখাসাক্ষাৎ হতো। কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি নেই। আমি নিজে আমার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। কারণ ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আমার অধিকাংশ বন্ধু, প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ’
এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জরুরি সতর্কতা জারি করেছে জানিয়েছে, ‘গাজার এখন খাদ্যের প্রয়োজন। কারণ লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার্থ অবস্থায় মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন। ’
গাজায় আল জাজিরার সংবাদদাতা বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম বোমা হামলার ফলে মানুষ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং ত্রাণ সরবরাহের ওপর ইসরায়েলি অবরোধের কারণে তাদের সন্তানদের জন্য খাবার নেই।
গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। জাতিসংঘের আহ্বান তোয়াক্কা না করে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।