রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

বরকলে সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্যে ফের কাঠ ব্যবসা বন্ধের অভিযোগ

দিগন্তের বার্তা ২৪ ডেস্ক : / ২৯৯ বার পঠিত
আপডেট : সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩, ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলায় ফের কাঠ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সেখানে চরম অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। অনেক কষ্টে দিন কাটছে স্থানীয় লোকজন। গাছ বিক্রি করতে না পারায় সংকটের সম্মুখীন বাগান মালিক, কাঠুরিয়া, মজুর, ব্যবসায়ী, পরিবহণ মালিক, শ্রমিকসহ অহরহ মানুষ। কিন্তু কী কারণে, কেন বা কারা বরকলে কাঠের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে, সে বিষয়ে কেউই কিছু বলতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি একই কারণে ভারতের মিজোরাম থেকে চোরাই কাঠ আনার অভিযোগ উঠলে বরকল উপজেলার হরিণা বিজিবি ক্যাম্পের উপর হইতে হঠাৎ অঘোষিতভাবে কাঠের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডিপোতে মজুত করা কয়েক লাখ ঘনফুট কাঠ আটকে পড়ে। ফলে ওই সময় চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন স্থানীয়রা। পরে নানা তদবির ও চেষ্টায় ২০২২ সালের মার্চের দিকে চালু হলেও চলতি বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে ফের অঘোষিতভাবে হরিণাসহ বরকল জোন এলাকায় কাঠের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, গতবার ব্যবসা চালু হওয়ার পর বরকল উপজেলার হরিণা বিজিবি ক্যাম্পের উপরে বিভিন্ন স্থানে মজুত ১২-১৪ লাখ ঘনফুট কাঠ আহরণ করে বাজারজাত করা হয়। এসব কাঠ থেকে হাতিয়ে ১০-১২ কোটি টাকার বাণিজ্য করে ১৪/১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট। বরকল কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলমের নেতৃত্বাধীন এ সিন্ডিকেটটি বিভিন্ন প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার নামে পরিবহণ করা ওইসব ১২/১৪ লাখ ঘনফুটের কাঠ থেকে প্রতি ঘনফুটে ৯০ টাকা করে হাতিয়েছেন, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ১০/১২ কোটি টাকা। অথচ তারা কোথাও বা কাউকে কোনো টাকাই দেননি। সিন্ডিকেটের সদস্যরা এসব টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। বিপরীতে সিন্ডিকেটটি তাদের বাণিজ্য শেষে বরকলে ফের কাঠের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ী ও জোত মালিকের।
তারা জানান, বরকল কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম, নূর মোহাম্মদ, মো. নূরুল আলম ও মাহবুব আলমসহ ১৪/১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। তারা জোত বাগানের কাঠ আহরণ, পরিবহণ ও বাজারজাতের জন্য বন বিভাগ দেওয়া প্রতি পারমিটের অনুকূলে প্রতি ঘনফুট কাঠের ওপর ৯০ টাকা করে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করেন। এছাড়া প্রতি পারমিট থেকে চেক আপের নামে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে এসব টাকা উত্তোলণ করেন। সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ীরা এসব চাঁদার টাকা দিতে অপরারগতা দেখালে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেন ওই সিন্ডকিটের সদস্যরা। এভাবে অনেক কাঠ ব্যবসায়ীকে নানা হয়রানিসহ বরকলে তাদেরকে কাঠ ব্যবসা করতে দেওয়া হয় নাই।
রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কাজল জানান, বরকল থেকে তার কয়েকটি পারমিটের কাঠ নিয়ে আসার সময় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে নানা হয়রানি করেছিলেন। বরকলের হরিণার কতিপয় অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীর কারণে নিয়মিতভাবে বৈধ কাঠ ব্যবসাও করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বরকল উপজেলার কাঠ ব্যবসায় অচলাবস্থা তারাই তৈরি করেছেন।
কাজলের মতো আরও অনেক কাঠ ব্যবসায়ীর একই অভিযোগ। রাঙামাটির কাঠ ব্যবসায়ী আবদুল মতিনের অভিযোগ, সিন্ডিকেটটিকে চাঁদা দিতে না পারায় তার ২টি পারমিটের কাঠ বরকলের ছোটহরিণা থেকে রাঙামাটি শহরে নিয়ে আসতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কুরবানি ঈদের আগের দিন ৬/৭টি পারমিটের আড়ালে প্রায় ২৫-৩০ হাজার ঘনফুট কাঠ বরকলের ছোটহরিণা থেকে রাঙামাটি সদরে নিয়ে আসেন। কিন্তু ঈদের পরদিন সিদ্দিক বেপারী নামে অন্য এক কাঠ ব্যবসায়ীকে তার কয়েকটি জোত পারমিটের কাঠ রাঙামাটি নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী।
আরও অভিযোগ উঠেছে যে, বরকল কাঠ ব্যবসায়ীর সভাপতি শাহ আলম ও তার সিন্ডিকেট এবং বরকলের বড়হরিণা ইউনিয়নের বাসিন্দা কামিনী চাকমার যোগসাজসে ছোটহরিণার উজান থেকে জোত পারমিটের আড়ালে প্রচুর ভারতীয় কাঠ পাচার করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। কিন্তু ছোটহরিণার নিচ এলাকার জোত পারমিটের কাঠ শতভাগ ব্যক্তি মালিকানাধীন বাগানের। অথচ বর্তমানে সেইসব বৈধ পারমিটের কাঠ পরিবহণ ও বাজারজাত বন্ধ থাকায় জোত বাগানের মালিকসহ বরকলের অসংখ্য মানুষ অর্থনৈতিকভাবে চরম সংকটে পড়েছে। বহু মানুষের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
এদিকে তাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন দাবি করে বরকল কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, আমরা কাঠ পরিবহণের ওপর কারও থেকে কোনো টাকা আদায় করি না। কাউকে কোনো রকম হয়রানি বা কারও ব্যবসা বন্ধও করে দেইনি। তবে কাঠ ব্যবসা করতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় ও ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে করতে হয় বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বরকল ও ছোটহরিণার জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শামসুল কবীর ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস বলেছেন, বরকলে কাঠ ব্যবসা বন্ধ থাকার পেছনে সেখানকার কাঠ ব্যবসায়ীরাই দায়ী। তাদের মধ্যে নানা রেষারেষি ও ভূল বোঝাবুঝির কারণে বরকলের এ পরিস্থিতি। ব্যবসাকে সচল করতে হলে কাঠ ব্যবসায়ীদেরকে এ সংকট নিরসন করতে হবে।
এদিকে বরকল উপজেলায় কাঠ ব্যবসা বন্ধের কারণ হিসাবে জেলা আওয়ামীলীগ কর্তৃক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হলেও তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর বলেন, বরকলে কাঠের ব্যবসা বন্ধ রাখার বিষয়ে আমাদের অভিযোগ দেওয়ার কাজটা কি। যতদূর জানি তা হলো স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধের কারণে ওই স্থানে কাঠ ব্যবসা আপাদত বন্ধ রয়েছে।

হাইকোর্ট এর এক আদেশ অনুযাযী গাছ কর্তন, আহোরণ ও পরিবহণের সময় সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ ছাড়া অন্য কোন সরকারী ও বেসরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করার কোন এখতিয়ার নেই।

এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মো. শোয়াইব খান বলেন, শুনছি বরকলে বেশ কয়েকমাস ধরে কাঠের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কী কারণে বন্ধ, তা কিছুই জানা নেই। এ ধরনের কারও কোনো অভিযোগও নেই। আমার কাছে স্থানীয় লোকজন এসে বলছেন, বরকলে কাঠের ব্যবসা বন্ধের কারণে বাগান মালিক, কাঠুরিয়া, শ্রমিক, পরিবহণ মালিক, শ্রমিকসহ সেখানকার মানুষ খুব কষ্টে রয়েছেন। সরকার বা বন বিভাগের পক্ষে বরকলে কোনো রকম কাঠ ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি বলে জানান বন কর্মকর্তা।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর