শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সংবাদ শিরোনাম :

ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা পলওয়েল পার্ক

দিগন্তের বার্তা ২৪ ডেস্ক : / ১৪২ বার পঠিত
আপডেট : সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:৪২ অপরাহ্ণ

কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম: স্বচ্ছ জলের বুকে ভেসে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে চলে যান রাঙ্গামাটির পথে। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাঙ্গামাটি জেলা। সবুজ অরণ্যে ভরা হ্রদের মিতালী শহর পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। প্রকৃতির অনিন্দ্য শহর খ্যাত এ জেলার প্রতিটি জনপদ প্রকৃতির রূপ দিয়ে গড়ে দিয়েছেন মহান সৃষ্টকর্তা। এমন বাহারী রূপ দেখতে পুরো বছর জুড়ে এ অঞ্চলে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাঙামাটি। রাঙামাটির বর্তমানে পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানের নাম পলওয়েল পার্ক। পলওয়েল পার্ক পুলিশের তত্ত্বাবধানে ডিসি বাংলো রোডের পাশে কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে। যা সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র।

বৈচিত্রময় ল্যান্ডস্কেপ, অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক বসার স্থান পলওয়েল পার্কটিকে দিয়েছে ভিন্ন ধরনের এক মাত্রা। নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে এবং বিনোদনের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পলওয়েল পার্ক।

মুখোশের আদলে তৈরী করা হয়েছে পার্কটির প্রবেশপথ। প্রবেশপথের পাশেই ভিন্ন আরেকটি মুখোশ আকৃতির টিকেট কাউন্টার। প্রবেশমূল্য, জনপ্রতি ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য টিকেট লাগবেনা। পার্কটি রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এখানে শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে কিডস জোন। শিশুদের আনন্দ দিতে এই পার্কে বিভিন্ন রকম রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকেটের মূল্য রাইড ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টিকেটের দামের তুলনায়, অনেক বেশি সময় ধরে বাচ্চারা এখানে রাইডগুলো উপভোগ করতে পারে।

বাঙালির জীবনের সাথে মিশে থাকা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে কিডস জোনের অপর প্রান্তে তৈরী করা হয়েছে ঢেঁকিঘর আদলের একটি স্থাপনা। গ্রামের নারীদের ঢেঁকিতে ধান ভানার এই ভাস্কর্য গ্রামীণ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের স্থাপত্য শৈলী এতটাই সুনিপুন, প্রথম দেখায় আপনার মনে হতে পারে বাস্তব কোনো দৃশ্য দেখছেন।

কিডস জোন থেকে সামনে এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ তৈরী করা আছে। এখানে বসলে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়, লেকের অথৈ জলের সীমানা দূরের আকাশে গিয়ে মিশেছে। আকাশ আর লেকের নীলের মাঝে পাহাড়গুলো যেন সীমারেখা হয়ে আছে। এর ঠিক পেছনেই তৈরী করা আছে কলসি কাঁখে নারী ভাস্কর্য। তাদের কলসের প্রবাহমান পানিতে তৈরী হয়েছে ঝর্ণা। দিনের আলো নিভে গেলে কৃত্তিম আলোয় এই ঝর্ণা আরও মোহময় হয়ে ওঠে।

পলওয়েল পার্ক এর একেবারে শেষপ্রান্তে তৈরী করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে পলওয়েল পার্ক কটেজ এবং সুইমিং পুল। লেকে ঘোরার জন্য বোটের ব্যবস্থা আছে, আছে জেট স্কিইং এর ব্যবস্থা, আছে কায়াকিং এর ব্যবস্থা। লেকের পার ঘেঁষে রাখা আছে বিচ চেয়ার। লেক আর পাহাড়ে সন্ধ্যা নামার দৃশ্য উপভোগ করতে শেষ বিকেলে এখানে বসতে পারেন আয়েশ করে।

অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় ইতিমধ্যেই রাঙামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মেরি গো রাউন্ড, হানি সুইং, মিনি ট্রেন, প্যাডেল বোট ইত্যাদি বিভিন্ন আকর্ষণীয় রাইড ছাড়াও পলওয়েল পার্কে আছে ভুতুড়ে পাহাড়ের গুহা, পাহাড়ি কৃত্রিম ঝরনা ও কলসি ঝরনা, ক্রোকোডাইল ব্রিজ, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প, লেকভিউ পয়েন্ট, হিলভিউ পয়েন্ট, লাভ লক পয়েন্ট, মিনি চিড়িয়াখানা, অ্যাকুরিয়াম, ফিশিং পিয়ার, ক্যাফেটেরিয়া, সুইমিংপুল, কার পার্কিং এবং পলওয়েল কটেজ।

রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কর্ণফুলি হৃদের উপরে রয়েছে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু। হ্রদের দুই পাশের দুটি পাহাড়কে সংযুক্ত করে ঝুলন্ত সেতু দাড়িয়ে আছে। এটি সিম্বল অব রাঙ্গামাটি হিসেবেও পরিচিত পেয়েছে।

*সুবলং ঝর্ণা*
সুবলং ঝর্ণা রাঙ্গামাটি থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বরকল উপজেলায় অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে উঁচু ঝর্ণা হিসেবে পরিচিত সুবলং ঝর্ণা বর্ষায় তার প্রাণ ফিরে পায়। প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নেমে আসা পানির পর্যটকদের ভীষণ ভাবে আকর্ষন করে। নৌ পথে যেতে প্রায় সময় লাগে এক ঘন্টা।

*মুন্সি আব্দুল রউফের সমাধি*

মূল শহর থেকে নৌ পথে ১৫ কিলোমিটার দূরে স্বচ্ছজ্বলরাশি দ্বারা বেশিষ্ট ছোট দ্বীপ বুড়িঘাট এলাকার চিংড়িখালে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি। এর চারদিকের প্রকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের বিমোহিত করে।

*কাপ্তাই হ্রদ*

কাপ্তাই হ্রদ বা লেক বাংলাদেশের এমনকি দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার বৃহৎতম মনুষ্যসৃষ্ট সাদু পানির হ্রদ। এটি প্রধানত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সৃষ্টি হলেও এই জলাধারে প্রচুর পরিমানে মিঠা পানির মাছ চাষ হয়। চাষকৃত মাছ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়।

নৈসর্গিক নির্মাণশৈলী সৌন্দর্যের শহর রাঙ্গামাটিতে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে রাঙামাটি গামী বিভিন্ন পরিবহনের যাওয়া যায়। ১৫০ টাকার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি বাস পেয়ে যাবেন। এরপর রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে এই পার্কে যেতে ৫০ টাকা সিএনজি ভাড়া পড়বে।

*খাবার ও থাকার ব্যবস্থা*
রাতের কৃত্রিম আলোয় এই ঝর্ণার সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। এখান থেকে কিছুটা এগুলেই পাবেন চটপটি আর ফুসকার দোকান। আরও একটু সামনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই পাবেন পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া। মুখরোচক সব খাবার এখানে পেয়ে যাবেন।

ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এগুলেই ফিশিং পিয়ার। এটি হচ্ছে একটি প্ল্যাটফর্ম। এটি দেয়া হয় যাতে জাহাজ, নৌকাগুলো সহজেই সেখানে ভিড়তে এবং নোঙ্গর ফেলে অবস্থান করতে পারে। এখানে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়াও এই পার্কে পিকনিকসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে অত্যাধুনিক কটেজ রয়েছে থাকার জন্য। কটেজটির নাম পলওয়েল পার্ক কটেজ। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিক বিনোদনের জন্য চলে যেতে পারেন রাঙ্গামাটির পলওয়েল পার্কে।।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরও খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর